শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এখনও সচল বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক হিমাগার

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক : বাংলাদেশের প্রথম পরীক্ষা মুলক ভাবে স্থাপিত প্রাকৃতিক হিমাগারটি এখনও সচল রয়েছে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে কৃষিবিদ মোঃ তোহিদুল ইসলাম বকুল পরীক্ষা মুলক ভাবে স্থাপন করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১সালের অক্টোর মাসে। এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হয় ২০১২সালের ২ফেব্রুয়ারী।

বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে । বদলে দিতে পারে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের ভাগ্যের চাকা।

জানা গেছে, কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের মৃতঃ আলহাজ্ব ডাঃ শমসের আলী শাহ এর পুত্র মীম সীড-এর স্বত্ত্বাধিকারী কৃষিবিদ মোঃ তোহিদুল ইসলাম বকুল বীরগঞ্জ পৌর শহরের দিনাজপুর পঞ্চগড় মহাসড়কের জগদল মৌজায় ১১০ টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মান করেন। হিমাগারটি নির্মানে সর্বসাকুর্ল্যে ব্যায় হয়েছে মাত্র ৫লক্ষ ৬২হাজার টাকা। বেসরকারী সংস্থা ক্যাটালিষ্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং কমপিটিবল টেকনোলজি ইনোষ্টোলেশন (সিটিআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। হিমাগারটি পরীক্ষা মূলক চালুর পর কাচা সবজি ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রাকৃতিক ভাবে আলু সহ সকল প্রকার কাঁচামাল হিমায়িত করে রাখার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করায় গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের উন্নয়নে এটি বেশ ভূমিকা রাখবে।

এই পদ্ধতিকে অনুসরণ এবং ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের হিমাগার নির্মিত হয়েছে। সেগুলিও এখনও সচল রয়েছে বলে জানান কৃষিবিদ মোঃ তোহিদুল ইসলাম বকুল।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং জিমার্ক এর সহযোগিতায় পাহাড়ী জনপদ খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় ১টি এবং বান্দরবন জেলার সদর উপজেলা ১টি ও আলীকদম উপজেলায় ১টি, জাপানের অর্থায়নে এবং জিমার্ক এর সহযোগীতায় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭টি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে রাজশাহীতে ১টি প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রথম নির্মিত প্রাকৃতিক হিমাগারটির বর্তমানে পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ভিতরে আলো-বাতাস সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং হিমাগারে রক্ষিত অবস্থায় আলুতে যেন গাছ না গজায় সে বিষয়ে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে হিমাগারটিকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে যাতে আবহাওয়ার পরিবর্তনে বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়।

তিনি জানান, দেশে এক সময় বিদ্যুৎHimagar-05 copy নিয়ে হাহাকার চলছিল। কৃষক এবং ব্যবসায়ীর আলুসহ বিভিন্ন সব্জি, ফল রক্ষণাবেক্ষণে হুমকির মুখে পড়ে যায়। তখন কৃষকের উৎপাদিত পচনশীল ফসল সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতির বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করি। পরে জানতে পারি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মেদেনিপুরে একটি প্রাকৃতিক হিমাাগার স্থাপন করা হয়েছে। যদিও তারা এ ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করতে পারেনি। আমি বাংলাদেশে প্রথম পরীক্ষা মুলক ভাবে বেসরকারী সংস্থা ক্যাটালিষ্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং কমপিটিবল টেকনোলজি ইনোষ্টোলেশন (সিটিআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করি। পরীক্ষা মুলক ভাবে এটি নির্মানের পর এটির কার্যকারিতার ক্ষেত্রে আমরা সফলতা লাভ করেছি। সরকারী ভাবে আর্থিক সহযোগীতা পেলে ২০ থেকে ২০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমান করা সম্ভব। প্রতি মৌসুমের মার্চ মাস থেকে কৃষকেরা এখানে একাধারে ৬ মাস পর্যন্ত আলু সহ বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারবেন। হিমাগারে পরীক্ষা মূলক ২৮দিন পর্যন্ত ফুলকপি ও ৭৫ দিন পর্যন্ত পাতা কপি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে।

এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে স্বপ্ল খরচে কৃষকেরা নিজেই নিজের উৎপাদিত পচনশীল ফসল সংরক্ষণ করতে পারবে। এতে করে কৃষককেরা আর্থিক ভাবে অধিক লাভবান হবেন এবং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদিত পচনশীল ফসল রক্ষা মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

হিমাগারটি ঠান্ডা রাখার জন্য তলদেশে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয় । উক্ত পানির মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব। পানি ১৫দিন পর পর পরিবর্তন করা হয়। বিদ্যুৎ চালিত হিমাগারের বিকল্প হিসেবে এই বিদ্যুৎ বিহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি আমাদের  গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মানের ক্ষেত্রে সরকারী বেসরকারী ভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে হিমাগারগুলির সময়োপযুগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একদিকে দেশের কৃষকেরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে মনে তিনি মনে করেন।

স্থানীয় কৃষক পুরেন চন্দ্র রায় জানান, ইতিপূর্বে হিমাগারের আলু সংরক্ষনের জন্য কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা খরচ হয়। কোন কারণে আলু পচে গেলে অনেHimagar-02 copyক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরন পাওয়ায় যেতনা। অথচ প্রাকৃতিক হিমাগারে আলু সংরক্ষনের জন্য ব্যয় হয় কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। বিদ্যুতের কারণে এখানে আলু সহ সকল প্রকার সবজি পচে যাওয়ার আশংকা থাকেনা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ী দিনাজপুর, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আমি বীরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় প্রাকৃতিক হিমাগারটি স্থাপন করা হয়। যদিও এটি পরীক্ষা মুলক ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এর সফলতা আমাদের মাঝে আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে। হিমাগারটির আরও কিছু পরিবর্তন এবং আধুনিকায়ন করা হলে এটি শুধু দেশে নয় বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কৃষিবিদ মোঃ তোহিদুল ইসলাম বকুলের এই প্রয়াস গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

Spread the love