শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবি আল মাহমুদের ৮০ তম জন্মদিন আজ

মোহাম্মদ সাকিব চৌধুরী:
অসংখ্য কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা, দেশের প্রধান কবি আল মাহমুদের ৮০ তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেন বাংলা সাহিত্যের মহান এই কবি। ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে/হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশ।’ কিংবা সোনালি কাবিন কবিতায়- ‘বধূবরণের নামে দাঁড়িয়েছে মহামাতৃকূল/গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল।’ আবার ‘আম্মু বলেন, পড়রে সোনা/আব্বু বলেন, মন দে/ পাঠে আমার মন বসে না/কাঁঠালচাপার গন্ধে।’ এরকম অসংখ্য কবিতা আর লেখনীতে কবি আল মাহমুদ সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে।বাংলা কবিতা যাদের হাত ধরে আধুনিকতায় পৌঁছেছে কবি আল মাহমুদ তাদের অগ্রগণ্য।বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য তিনি আজ অপরিহার্য। তার আগমন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় সকলের কাছে। তার শ্রম সাধনা, কবিতার প্রতি ভালোবাসা তাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তিনিও নিজেকে ইতিহাসের সমান্তরালে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছেন সার্থক ভাবে। কবিতা তাকে এনে দিয়েছে খ্যাতি যশ ।অসংখ্য কালজয়ী কবিতা লিখেছেন কবি আল মাহমুদ। সারাটা জীবন তিনি পার করেছেন কবিতার জন্য । বলা যায় কবিতা দিয়েই সাজিয়েছেন তিনি নিজের জীবনকে। এর মধ্যে দিয়েই তিনি পেয়েছেন আনন্দ, প্রেম, ভালোবাসা, খ্যাতি, মোহ, সবই । কবিতার জন্য পালিয়েছেন এলাকা ছেড়ে, কবিতার জন্য লক্ষ্যচূত হবার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, কবিতার জন্য ধর্মান্ধরোষের থেকে ক্ষণিকের জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বিদেশ পর্যন্ত।১৯৬৮ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সোনালি কাবিনের সনেটগুচ্ছ লেখা শুরু হয়। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। তিনি ১৯৬৮ সালে কালের কলস কাব্যগ্রন্থের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন সাংবাদিক । প্রুফ রিডার থেকে হয়েছেন দৈনিকের ডাকসাইটে সম্পাদক। জেলও খেটেছেন । শিল্পকলা একাডেমীতে চাকরি করেছেন তিনি । জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরিও করেছেন তিনি। ভাষার ওপর কবিতা লিখে গ্রেফতারির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে পালিয়েছিলেন। আবার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয় ভাবে।তিনি প্রায় শতাধিক গ্রন্থ লিখেছিলেন। উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হলো, কবিতা : লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, প্রহরান্তরের পাশ ফেরা, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, মিথ্যেবাদী রাখাল, আমি দূরগামী, বখতিয়ারের ঘোড়া, দ্বিতীয় ভাঙন, নদীর ভেতরে নদী, উড়াল কাব্য, বিরামপুরের যাত্রী, না কোন শূন্যতা মানি না প্রভৃতি ,তার লেখা ছোটগল্প : পান কৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবনিক, ময়ূরীর মুখ প্রভৃতি। উপন্যাস : কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, পুরুষ সুন্দর, চেহারার চতুরঙ্গ, আগুনের মেয়ে, নিশিন্দা নারী প্রভৃতি। শিশুতোষ : পাখির কাছে ফুলের কাছে, একটি পাখির লেজ ঝোলা। প্রবন্ধ : কবির আত্মবিশ্বাস, কবির সৃজন বেদন, আল মাহমুদের প্রবন্ধ সমগ্র। ভ্রমণ : কবিতার জন্য বহুদূর, কবিতার জন্য সাত সমুদ্র প্রভৃতি। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে আল মাহমুদ রচনাবলী, কবিতা সমগ্র-১, ২ উপন্যাস সমগ্র-১, ২, ৩।জীবনে তিনি অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন । তার পাওয়া পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), সুফী মোতাহার হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৭৬), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক- ২০০৪, কবি গোলাম মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৬) ।

Spread the love