মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শারীরিক প্রতিবন্ধী রীতার অদম্য ইচ্ছার শক্তির কাছে হার মেনেছে দারিদ্রতা

মো: আব্দুর রাজ্জাক ॥ দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শিবরামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপাড়া গ্রামের মৃত যদু বর্মনের মেয়ে রীতা রানী। শারীরিক প্রতিবন্ধী রীতার অসুস্থ মাকে নিয়ে বাঁশের তৈরি জীর্ণ খুপরি ঘরে বসবাস। মা জোৎস্না বর্মন কাজ ও ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

 

অভাব আর দরিদ্রতাকে জয় করে মেধাবী এ মেয়েটি চালিয়ে যাচ্ছে তার শিক্ষাজীবন। পিতৃহারা মেয়েটি এখন এইচএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। শারীরকি প্রতিবিন্ধী রীতার অদম্য ইচ্ছা শক্তরি কাছে হার মেনেছ দারিদ্রতা। পিতার অবর্তমানে সংসারে অসুস্থ মা এবং বোন প্রমিলা বর্মনকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের স্বপ্ন সে।

 

 

বীরগঞ্জের নিভৃত পল্লী গোবিন্দপাড়া গ্রামের পিতৃহীন শারীরিক প্রতিবন্ধী রিতা রায় ১১ মাস বয়স থেকেই কঠিন দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে শিক্ষার আলো গ্রহন করে আসছে। গ্রামের গোবিন্দপাড়া সোহাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ২০০৮ সালে ৫ শ্রেনী পাশ করে পার্শ্বের গ্রামের পাবলিক দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছে প্রকাশ করায় তার বিধবা মা জোস্না বেওয়া মানুষের বাড়ীতে ঝি’য়ের কাজ এবং দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে লেখাপড়ার খরচ জোগান দিয়ে আসছে। খেয়ে না খেয়ে রিতা রায় মায়ের জোগান দেয়া সামান্য অর্থের উপর ভর করেই তার লেখাপড়ার চালিয়েছে। কোন রকম প্রাইভেট পড়া ব্যতিত সে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় (৩ দশমিক ৬৩) মার্কস পেয়ে মানবিক বিভাগে বি গ্রেডে পাশ করে।

 

এসএসসি পাশ করার পরেও রিতা রায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় তাই তার মা এবং বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকদের সহযোগীতায় এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে আবারো ভর্তি হয়। এইচএসসিতে ভর্তির পর তার কষ্ট আরো বেড়ে যায়। গ্রামের বাড়ী থেকে কলেজের দুরুত্ব ২২ কিঃমিঃ পথ। যাতায়াতের এই দীর্ঘ পথ হেটে এবং ভিক্ষে করে বাসের ভাড়া এবং নিজেদের খাওয়ার পয়সা উঠাতে হত তাকে। শত কষ্টের মাঝে হার মানেনি রিতা রায়,প্রতিদিন সে কলেজে যেতযে কারনে কলেজে তার উপস্থিতির হার ৯০ ভাগ বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

 

শারীরিক প্রতিবন্ধী রিতা রায় জানান, আজ যতটুকু শিক্ষার আলো সে পেয়েছে সমস্তটাই তার মায়ের অবদান। মানুষের বাড়ীতে ঝি’য়ের কাজ এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে যে আয় হত সেখান থেকেই তার মা তাকে লেখাপড়া করার জোগান দিয়েছে এবং ৩ বেলার জায়গায় একবেলা অন্ন জুগিয়েছে। পৈত্রিক সহায় সম্পত্তি না থাকায় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই রয়েছে। আর তখন থেকেই সংসারের ঘানি টানতে মা জোস্না বেওয়াকে মানুষের বাড়ীতে ঝি’য়ের কাজ ও ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে।

সে আরো জানায় প্রতিবন্ধী দু’বোনের মধ্যে সে ছোট, বড় বোন প্রমিলাও প্রতিবন্ধী এত কষ্টের মাঝেও তাকে গ্রামেই কৃষিকাজ করা এক যুবকের সাথে বিয়ে দিয়েছে তার মা। তাদের সংসারে এক কন্যা শিশু জন্ম নিয়েছে গত বছর। বাবা গোবিন্দ বর্মন যদু মৃত্যুর আগ মুর্হুত পর্যন্ত দি রওশন সার্কাসে কাজ করেছে।

 

রিতা রায় তার ভবিষৎ ইচ্ছে জানাতে গিয়ে বলেন,ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহনের প্রবল ইচ্ছে রয়েছে তার। শিক্ষক হয়ে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠির হয়ে কাজ করতে চায় সে। আর এ জন্যে তার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে সরকারসহ সমাজের সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন তিনি। পরিবারটির ভবিষৎ ভোরনপোষন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সরকার ও সকলের কাছে আর্থিক সহযোগীতার সুযোগ চায় রিতা।

 

শিবরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান চনক চন্দ্র অধিকারী জানান, রিতার শিক্ষার জন্যে তার মা প্রতিদিন এক রকম যুদ্ধ করে চলেছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা ও ঝি’য়ের কাজ করে মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছে তবে রিতা আরো পড়তে চায় কিভাবে হবে এটা নিয়ে শংকা,যদি সরকার ও বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো একদিন রিতার ভবিষৎ উজ্জল হবে।

 

বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ খায়রুল ইসলাম জানান, গোবিন্ধপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রিতা রায় এবার এইচএসসি পরিক্ষার্থী। তার লেখাপড়ার করার অদ্যম ইচ্ছা রয়েছে বলেই আমরা সকলে মিলে সহযোগীতা দিয়ে ফরম পুরন করিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস রিতা ভালো ফলাফল করবে আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।

Spread the love