শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের বেতন বন্ধ, ধারদেনার বোঝা বাড়ছে,মুখে হতাশার ছাপ

ষ্টাফ রিপোর্টার, বিরামপুর (দিনাজপুর) ॥ জাহেদুল ইসলাম। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার “মুকুন্দপুর মডেল” কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসার চালাচ্ছিলেন। স্বপ্ল আয়ে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। স্কুলের বেতনের পাশাপাশি সংসারের ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে চলত তার সংসার কিন্তু করোনার কারনে গত ৬ মাস ধরে স্কুলের বেতন বন্ধ । নেই সরকারি সহায়তা। এতে কষ্টে কাটছে তার জীবন।বর্তমানে তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন।

বিরামপুর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে উপজেলায় ৪৫টি কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। স্কুলগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন ৪৫০ জন। তারা সবাই দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক,কর্মচারীগণ এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা বা কোন সুযোগ সুবিধা পাননি।

সরেজমিনে উপজেলার বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুলঘুরে দেখাগেছে,‘শিক্ষার্থীদের পদাচরণ না থাকায় বিদ্যালয় মাঠে ঘাসগুলো বেশ বড় হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে বারান্দায় আবার জালসে ধরে গেছে। কিছু বিদ্যালয়ের ঘরগুলোর মেঝে কাঁচা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোতে ধরেছে উঁইপোকার আক্রমণ। সব মিলে বিদ্যালয়গুলো এক ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

জাহেদুল ইসলাম বলেন,‘ স্কুলের বেতন আর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ে সংসার চলত কিন্তু গত ছয়মাস বেতন বন্ধ ,বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালিয়ে আসছি। মাঝে মাঝে মানুষের জমিতে ধান রোপণ করার কাজও করেছি। কিন্তু এখন ধার চাইতেও লজ্জা লাগে। দোকানেও অনেক বাকি পড়ায় দোকান মালিকও কথা শোনায়। তিনি বলেন,‘ সংসারে কষ্ট ছিল কিন্তু এমন সমস্যায় পড়তে হবে ভাবতেও পারিনি।বর্তমানে দেশের বিভিন্নস্থ্ানে রংমিস্ত্রির কাজ করছি।

মঞ্জুরুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষক বলেন,‘ কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পর মেধাবিকাশ স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চলাতেন। অভিভাবকরা করোনার ভয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন না। তিনি বলেন,‘ছয় মাস কষ্ট করলাম আর কত কষ্ট করতে হবে কে জানে। মালিকপক্ষ শুধুধৈর্য্য ধরতে বলছেন।

শিক্ষকরা বলছেন,আগামী ৩১অক্টোবর পর্যন্ত  সরকারি নির্দেশনা থাকায় বিদ্যালয়গুলো খোলা সম্ভব হচ্ছেনা। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়গুলোর বন্ধ যদি দীর্ঘায়ু হয় তাহলে এই কষ্ট আরো দিগুণ হবে।

“রোজগার্ডেন স্কুলের” পরিচালক মো. আমিনুর রহমান বলেন,‘ ওই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন। তাদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে ৪৯ হাজার টাকা দরকার হয়। শিক্ষকদের গত মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা মাসিক বেতন বন্ধ করায় আর শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নী।

বিরামপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.মাহাবুর রহমান বলেন,‘ মার্চ মাস থেকে দেশের সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অভিভাবকদের কাছ থেকে বেতন আদায় করা সম্ভব হয়নী কিন্তু বিদ্যালয়গুলো ঘরভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা না পেলে শিক্ষকদের হাহাকার আরও বাড়বে।

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার বলেন,‘ কিন্ডারগার্টে স্কুলগুলোর নামে সরকারি কোন বরাদ্ধ এখন পর্যন্ত আসেনি।যদি আসে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

Spread the love