শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

“স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন”

এস.এম.রকি,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : “স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে হ্যাঁ, সিজারকে না বলুন” এই স্লোগান নিয়ে প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব (নরমাল ডেলিভারী) করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আর এ কাজটি পরিচালনা করছেন কয়েকজন চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও নার্স ।

গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ০৪ জন মা স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছে উপজেলার পাকেরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ব্রেষ্ট ফিডিং কর্ণার,ওআরটি কর্ণার, অটিজম কর্ণার,এ এন সি ও পি এন সি এবং কেএমসি কর্ণার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

এদিকে অনেক বেসরকারী হাসপাতাল আর ক্লিনিক হওয়ায় নরমাল ডেলিভারী প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু অদক্ষ,    প্রশিক্ষণবিহীন দাই মা’ও আছে। এই অদক্ষ দাই’মার কারণে অনেকসময় প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

এমন এক পরিস্থিতিতে সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র এবং অদক্ষ দাইমার হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতেই খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: আবু রেজা মো: মাহমুদুল হক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুলের নেতৃত্বে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্øেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক,নার্স ও মিডওয়াইফগণ টিম ওয়ার্ক শুরু করেন। নরমাল ডেরিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ  প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে  ’প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর প্রেগনেন্সি ম্যাপের মাধ্যমে ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে গর্ভবতী মায়েদের কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ ও পরীক্ষা, বিনা মূল্যে দেওয়া হয় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ট্যাবলেট। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক,চেয়ারম্যান-মেম্বার,ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং প্রদান করেন এবং ২৪ ঘন্টা সেবার জন্য চালু করা হযেছে হটলাইন ।

এই টিম ওয়ার্কের ধারাবাহিকতায় এই বছরের অক্টোবর মাসে এ পর্যন্ত ৫০ টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে এপর্যন্ত ৮১৩ টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। আর গত ২০১৮ সালে নরমাল ডেলিভারী হয় ৮৯১ টি । এভাবে হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রসব পূর্ববর্তী এ এন সি সেবা নিয়েছে ৬০০৬ জন এবং প্রসব পরবর্তী পি এন সি সেবা নিয়েছে ১২২৭ জন। যার ফলে বিগত বছরে স্বাস্থ্য সেবায় বিভাগের তৃতীয় ও জেলার প্রথম হয়েছিল খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

শুক্রবার (১৮অক্টোবর ) খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারী হওয়া উপজেলার কায়েমপুর গ্রামের টুম্পা আক্তার (২৩) জানান, শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ কর্মীদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসবে সন্তান হয়েছে এতে আমরা অনেক খুশি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্র্রাপ্ত) ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এবং হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে যার ফলে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না এবং সকলের সহযোগিতায় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা সরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: আবু রেজা মো: মাহমুদুল হক জানান,পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী  চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয় যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরো জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড়, মশারি, সাবান,লোশন ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, ‘স্বাভাবিক প্রসবের জন্য খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যা  করছে তা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। উপজেলা প্রশাসনও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। তাছাড়া হাসপাতালের স্বাভাবিক প্রসব ও প্রসুতি মায়েদের হাসপাতালমুখী করার কার্যক্রমগুলো জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। যাতে করে সবাই এমন কাজে উৎসাহিত হয়

Spread the love