মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৪ মিলিয়নকে বাদ দিয়ে আসামে খসড়া তালিকা

ভারতের বহু আলোচিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশ করেছে আসামের রাজ্য সরকার। প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদন পড়েছে। এর মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর বাদ পড়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দা। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

এর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে বছরের শেষ দিন ঠিক রাত বারোটায় এই তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। আর পরদিন সোমবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তালিকার প্রতিলিপি টাঙিয়ে দেয়া হয়।

এই তালিকা থেকে বহু বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম বাদ পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক আর উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে ২০ লাখেরও বেশি মুসলিম ভারতের আসাম রাজ্যে গেছেন। বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতীয় নাগরিক স্বীকৃতি পেতে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে বসবাসের পারিবারিক প্রমাণপত্র দিতে বলা হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরিরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেননি। নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র নেই অনেকেরই। তাই এনআরসি তালিকার আওতায় ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক মুসলিমকে বের করে দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

তবে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল সাইলেশ বলেন, যাদের এখন পর্যন্ত যাচাই করা হয়েছে তাদের নিয়ে এই খণ্ডিত খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বাকিদের নাম বিভিন্নভাবে যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই আমরা আরেকটি খসড়া প্রকাশ করব।

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছর আসামে সরকার গঠন করে। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। তালিকা প্রকাশকে ঘিরে তাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মুসলমান অধ্যুষিত বরপেটা, দুবরি, করিমগঞ্জ, কাছাড়সহ বিভিন্ন জেলায়। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়।

নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা আগেই বলেছিলেন, আসামে বসবাসরত ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ চিহ্নিত করতেই এনআরসি করা হয়েছে। এতে যাদের নাম থাকবে না, তাদের ফেরত পাঠানো হবে।

তবে তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি’র রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা বলেন, প্রথম তালিকায় বাদ পড়াদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারো নাম যাচাই করা একটা ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া। প্রথম তালিকা থেকে কোনো পরিবারের দুয়েকজনের নাম বাদ পড়তে পারে। বাকিদের তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

১৯৮৫ সালে আন্দোলনের মুখে আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ও ভারত সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি চুক্তির প্রেক্ষাপটে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আসামে নাগরিক তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন।

পরবর্তী খসড়া তালিকার বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী এপ্রিল মাসে কোর্টের পরবর্তী শুনানি হবে বলেও জানান তিনি। সাইলেশ আরো বলেন, তবে পুরো প্রক্রিয়াটি ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ হবে।

২০১৫ সালের মে মাসে শুরু হওয়া আবেদন প্রক্রিয়ায় আসামের ৬৮ লাখ পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ৬ কোটি নথি বা দলিল গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে ২০০৫ সালে কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকার ও আসামের প্রভাবশালী সর্বদলীয় ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক শেষে সেখানকার বৈধ নাগরিকদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়।

এদিকে তালিকা প্রকাশের পর যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়ানোর জন্য রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আসামে প্রায় ৬০ হাজার পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীও।

Spread the love