মাহাবুর রহমান,বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরহাদ হোসেনসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর এবং ইউএনও এর কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯ জন দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরীর বেতন ছাড় করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কর্মকর্তার মোটা টাকার বানিজ্য এবং ইউএন এর নির্দেশ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার মিথ্য তথ্যের কারনে ঘটেছে বলে ইউএনও ও সংশ্লিষ্ঠদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে।
ইউএন, শিক্ষা কর্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষকসহ সচেতন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটা টাকার বিনিময়ে অবৈধ শিক্ষক কমিটি, ভূয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে ৩৯ জন নৈশ প্রহরীর নিয়োগ নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক ছিলো। টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার কারনে ইতিপূর্বেও সাবেক সংসদ সদস্যকে ধাওয়া, সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানকে গনধোলাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়োগ নিয়ে প্রথম থেকেই বিভিন্ন গনমাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশ হয়।
ইউএনও সৈয়াদ ফরহাদ হোসেন রংপুর সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর ব্যবহৃত সরকারী মুঠোফোন থেকে সাংবাদিকদের জানান তিনি ভারতে পনের দিনের প্রশিক্ষণ শেষে গত বুধবার তিনি নবাবগঞ্জে যোগদান করেন। বুধবার তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে বসার কিছুক্ষণ পরেই অতর্কিত হামলার শিকার হন। পরে জানতে পারেন যে, অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ায় গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ থাকা ৩৯ জন নৈশ্য প্রহরীর বেতন ছাড়ের জন্য গত বুধবার শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম ব্যাংকে বিলের কাগজ জমা দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশেই শিক্ষা কর্মকর্তা অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব নৈশ্য প্রহরীর বিলের কাগজ জমা দিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পরে। এ গুজবে অবৈধ এ নিয়োগে বাতিলের দাবীদাররা তাঁর উপর হামলা করে।
ইউএনও ফরহাদ হোসেন জানান, নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় তিনি ওই নিয়োগের আজ পর্যমত্ম কোন অনুমোদন দেননি। নিযোগ বাতিলের দাবী তিনিও জানিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া নৈশ প্রহরীদের বেতন ছাড় করতে তাঁর অনুমোদন বা নির্দেশের কোন বিষয় নেই। তাঁর পরও তাঁর মৌখিত নির্দেশনের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম একাধিকবার তাঁকে মোটা টাকার অফারও দিয়েছেন। ইউএনও সৈয়দ ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে সতর্কও করেছেন। নিজেকে বাঁচাতে শিক্ষা কর্মকর্তা সকলের কাছে তাঁর মৌখিক নির্দেশের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে ইউএনও সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন গত বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া নৈশ প্রহরীদের বেতন ছাড় করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির নূরে আলম সিদ্দিকী, শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মতিনুর রহমান প্রতিটি নৈশ্য প্রহরীর কাছ থেকে পুনরায় এক লাখ বিশ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ টাকা নিয়ে শিক্ষক কমিটির রেজুলেশন, সিদ্ধান্ত, এবং বিলের জন্য পর্যাপ্ত কাগজ ছাড়াই বিল জমা দিয়েছেন। তবে ইউএনও সহ প্রশাসনের চার কর্মকর্তা কর্মচারীকে দলীয় নেতাকর্মীরা মারধর করলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জিয়াউল হক মানিক জানান, মোটা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে নৈশ প্রহরী নিয়োগ হওয়ায় নিয়োগবঞ্চিত ও এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলো। বেতন ছাড়ের খবর শুনে নিয়োগ বঞ্চিতরা এবং ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদানকারী সিন্ডিকের সদস্যরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুর্ন করতে ঘটনাটি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের বলে প্রচার করছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম দাবী করেন তিনি ইউএনওকে কোন টাকার প্রস্তাব দেননি। গত ১৪ আগষ্টের শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতির লিখিত নির্দেশ ও উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের মৌখিত নির্দেশে নৈশ প্রহরীদের বিল জমা দিয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন ১৪ আগষ্টের শিক্ষা কমিটির সভায় কোরাম পূরণ হয়েছিলোনা।
তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ১৪ আগষ্টের শিক্ষা কমিটির সভা ডাকা হলেও কোরাম পুরন না হওয়ায় সভায় হয়নি। নৈশ প্রহরীরা বিল-বেতন ছাড়া অনেক দিন ধরে কষ্ট করছে বলে বেতন দিতে লিখিত নির্দেশ দেওয়া। লিখিত নির্দেশ দিতে কোন প্রার্থীর কাছ থেকে একটি টাকাও নেওয়া হয়নি বলে নূরে আলম সিদ্দিকী দাবী করেন।
উপজেলার হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের হিসবা রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান, কোন কার্যালয়ের বিল জমা দিতে হলে বিলের সঙ্গে বাজেট, নিয়োগপত্র, যোগদান প্রতিবেদন, মেডিকেল ফিটনেস সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজ সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংক কর্তপক্ষ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে সেটি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেটি রিসিভ করে নেবেন। কিন্তু ৩৯ টি নৈশ প্রহরীর বিল ব্যাংকের মাধ্যমে না এসে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মতিনুর রহমান বিলটি শিক্ষক কর্যালয়ে জমা দেয়। যা সম্পূর্ণ অবৈধ হয়েছে বলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান।
মো.মাহাবুর রহমান
প্রতিনিধি
বিরামপুর,দিনাজপুর
০১৭১৩-৬৮৬৪৫৩