বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা : পথে পথে ভোগান্তি

Road01পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করতে যাত্রাপথের অন্তহীন ভোগান্তিকে সাথে নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করেছে নগরবাসী। ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে অধিকাংশ পেশাজীবী মানুষই অফিসে হাজিরা দিয়েই ধরেছেন গ্রামের পথ। ভিন্নতা ছিল না প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও। বৃহস্পতিবার সেখানে ছিল না কোনো প্রকারের কর্মব্যস্ততা। বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে অফিস খোলার পরপরই অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী হাজিরা দিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ে খুব কম সংখ্যাক কর্মকর্তা কর্মচারীকেই কাজে দেখা গেছে। জানা যায়, আগামীকাল ৪ অক্টোবর শনিবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিজয়া দশমীর ছুটি। তারপরের দিনই শুরু হচ্ছে কোরবানি ঈদের ৩ দিনের ছুটি। ফলে ৫ দিনের এ ছুটির আগে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার থেকেই অফিস ছাড়তে শুরু করেন।
এদিকে আগামী ৬ অক্টোবর সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। ফলে ঈদের বাকি এখনো ৩ দিন। তবে ছুটি শুরু হওয়ায় ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে পুরোদমে। বৃহস্পতিবার রাজধানী থেকে বাস ট্রেন ও লঞ্চে দেখা গেছে অতিরিক্ত ভিড়। অগ্রিম টিকিট কেটেও ট্রেনের যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী ১৬টি আন্ত:নগর ট্রেনের সিডিউল প্রায় লণ্ডভন্ড হয়ে গেছে। কমলাপুর এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষার প্রহর গুণছেন বাড়িতে যাবার আশায়।
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাসে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল শেষ অফিস। সে কারণে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হাজিরা দিয়ে ঘরে ফেরা মানুষের তাড়া ছিল সবখানে। সদরঘাটে সকাল সন্ধ্যা যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চগুলো গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় ছিলো অত্যাধিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারনে এ রুটে চলাচলকারি কোন বাস বা কোচ ঠিক সময়ে ছেড়ে যায়নি। বাস এবং কোচগুলো যানজটের কারনে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারার কারনে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা পর যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে ছেড়ে যায়। শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলীতে সকালে কাউন্টারে গিয়ে অপেক্ষার পর দুপুরে গাড়িতে উঠে রওনা হয়েছেন অনেকে। ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সড়ক পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের শিকার হচ্ছেন।
পক্ষান্তরে ট্রেনে অগ্রিম টিকিটের যাত্রীরা প্রথম দিন বুধবার নির্বিঘ্নে যাত্রা করলেও বৃহস্পতিবার ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। যাত্রীর অত্যধিক চাপ থাকায় ট্রেনগুলোতে টিকিট কেটেও আসনে বসতে পারেননি অনেকে। তারওপর রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর সিডিউল প্রায় লন্ডভন্ড। বুধবার রাত থেকে ট্রেনগুলোর বিলম্ব শুরু হয়। বৃহস্পতিবার মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে পড়লে সাড়ে ৩ ঘন্টা বিলম্বে ঢাকা এসে পৌছে।
এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুর রুটে চলাচলকারী একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস দুটি ট্রেনই আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও দেড় ঘন্টা বিলম্বে ঢাকা ছেড়ে গেছে। আর লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনিট সাড়ে ৩ ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে। ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে বৃহস্পতিবার যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। ঢাকা-জামালপুরে রুটে চলাচলকারী অগ্নিবিনা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের এত ভীড় ছিলো যে ছাদে তিল ধারনের জায়গা ছিলো না।
প্রসঙ্গত ঈদের ছুটির সাথে দুদিনের বাড়তি সুযোগ নিয়ে বা ম্যানেজ করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সাথে সময় কাটাতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটি শেষে এবারও বুধবার এবং বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেবেন না অনেকে। ফলে তার পরের ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে একবারে ১২ অক্টোবর অফিসে ফেরার সুযোগ নেবেন তারা। এ পসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্যবারের চেয়ে এবার ছুটির আবেদনকারীদের সংখ্যা বেশি। ফলে অক্টোবরের প্রথম ২ সপ্তাহে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় কার্যত স্থবির থাকবে।

Spread the love