রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বীরগঞ্জে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পদ পরিত্যাক্ত লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

মোঃ আবেদ আলী, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ বীরগঞ্জে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি ৪৪ বছর ধরে পরিত্যাক্ত । লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার । বহুতল সুপার মার্কেট নির্মানের দাবী জনগনের।

ইংরেজ সরকারের সময়ে ১৮৯০ইং সালে বীরগঞ্জ থানা গঠনকালে ১৮৭ টি মৌজার জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা পরিষদ ২ দশমিক ৩৭ একর জমিতে একটি ডিস্পেনচারী, একটি ডাক্তার (এম.বি.বি.এস) কোয়াটার, একটি কম্পাউন্ডার কোয়াটার নির্মানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ৩১ শর্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স নির্মান করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্স নির্মানের পর পুরাতন ২ দশমিক ৩৭ একর জমিতে নির্মিত সরকারী ডিস্পেনচারী, এম.বি.বি.এস কোয়াটার, কম্পাউন্ডার কোয়াটার পরিত্যাক্ত হয়। দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকার পর লুটেরা বাহিনীর সদস্যরা ইট, টিন, কাঠ, লোহার পিলারসহ যাবতীয় মালামল লুট করে কমপ্লে­ক্সটি নিশ্চিহৃ করে দেওয়া হয়।

এমবিবিএস কোয়াটারটি উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় ও কম্পাউন্ডার কোয়াটার কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যাবহার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ফাঁকা মাঠ পরিত্যাক্ত হওয়ায় এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যাবসায়ী সরকারী সম্পত্তির পূর্ব ও দক্ষিন বাহু দখল করে শতশত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ি নির্মান করে ভোগ দখলে আছে।

১৯৭১ইং সালে স্বাধীনতার পর সরকার বদল হলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। স্বাধীনতার পর ৭-৮ বার উচ্ছেদ অভিযানে হাজার হাজার ব্যাবসায়ীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের স্বীকার ও লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে। এছাড়াও অসহায় ব্যাবসায়ীদের কাছে কাগজ করে দেওয়ার নাম করে জেলা পরিষদের ও স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসৎ কর্মচারী মাকের্ট করে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাবসায়ীদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারনা করেছে বারবার। এরপর এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা পরিষদের কাছে বহুতল সুপার মার্কেট নির্মানের দাবী তোলে কিন্ত ২’বিভাগের মালিকানা নিয়ে টানাটানির কারনে জনতার দাবী পুরন হয়নি ৪৪ বছরেও।

বর্তমান সরকারের সময়ে দিনাজপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনেরঞ্জনশীল গোপালের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের মালিকানার দাবী প্রত্যাহার করে নেয়। দিনাজপুর জেলা পরিষদ বহুতল সুপার মার্কেট নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করে। গত ২৬ অক্টোবর/২০১০ ইং জেলা পরিষদের ‘‘বহুতল সুপার মার্কেট’’ নির্মানের ভিত্তি প্রস্তর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধোধন করে মিষ্টি বিতরন করা হয়। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল সুপার মার্কেটের ডিজাইন ও প্ল্যান তৈরী করে পরিত্যাক্ত সরকারী ডাক্তার খানার মাঠে সুপার মার্কেট নির্মানের জন্য হাজার বছরের পুরাতন আমগাছ গুলো কেটে ফেলা হয়। দিনাজপুর জেলা পরিষদ ৩-তলা প্লান তৈরী করে, ১ম তালায় ১৮৯টি দোকান ঘর, ২য় তালায় ২০০টি দোকান ঘর ও ৩য় তালায় ব্যাংক, বীমা ও অফিস সেটিংয়ের জন্য ১২ হাজার বর্গফুট বরাদ্দ গ্রহনের জন্য র্নিধারিত ফরমে দরখাস্ত আহবান করা হয়।

প্রতিটি ফরম ১০০০ টাকা (অফেরৎযোগ্য) মুল্যে শতাধিক ফরম বিক্রি কর হয়। শর্ত মোতাবেক প্রথম কিস্তি ৫০ হাজার টাকা এককালিন জমানত হিসেবে গ্রহন করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও মার্কেট নিমার্ণের টেন্ডার আহবান করা হচ্ছে না। দিনাজপুর জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক মোঃ আজিজুল ইমাম চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করা হলে তিনি নিশ্চত করে জানান সম্পূর্ণ মার্কেটের এক ছাদ ডিজাইন করা হয়েছে। সে কারনে পরর্বতীতে মার্কেটে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের সমস্যার কথা বিবেচনা করে নুতন ভাবে ডিজাইন করতে সামান্য বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই বহুতল সুপার মার্কেট নির্মান কাজ শুরু হবে বলে আস্বস্থ করেন।

এলাকার ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল জানান ২ দশমিক ৩৭ একর সরকারী সম্পত্তি পরিত্যক্ত হওয়ার পর মাকের্ট নিমার্ন করে দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া হলে প্রতি বছর মার্কেট থেকে সরকারী লাখ লাখ টাকা আয় হতো বলে মতামত ব্যাক্ত করেন।

Spread the love