শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঠাকুরগাঁওয়ের দর্জিপাড়া নিজের কাপড় কোন ঈদে সেলাই করা হয় নাই

রবিউল এহ্সান রিপন, ঠাকুরগাঁও ॥ নিপুন হাতে থান কাপড় কেটে সেলাই করে আমাদের জন্য যারা পড়ার উপযোগি কাপড় তৈরি করে তেমনি একজন কারিগড় দিপক অধিকারি জানান, ১০-১৫ বছর থেকে কাপড় সেলাই করি। কোন ঈদে নিজের জন্য কাপড় সেলাই করতে পারি নাই। সেলাই করবো করবো বলে সময় শেষ হয়ে যায়। আমরা মজুরির বিনিময়ে কাপর কেটে জামা, প্যাান্ট সেলাই করি। ভালো লাগে যখন কেও আমাদের সেলাই করা কাপড় পড়ে ঘুড়ে। ভালো ব্যবসার জন্য ঈদ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। এ সময়ে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় এবং তা অব্যাহত থাকে চাঁদ রাত পর্যন্ত।

সামনে ঈদ, নতুন কাপড় না হলে কি ঈদ হয়। নতুন জামা, থ্রী পিচ, পাঞ্জাবী ছাড়া ঈদ যেন কারো ঘরে আসেই না। আর এসব নতুন থান কাপর কিনতে মানুষের উপচেয়ে পড়া ভির মার্কেটে। কিন্তু এই নতুন থান কাপড়কে যারা সুন্দর নিপুন হাতের ছোঁয়ায় আমাদের পড়ার উপযোগি করে তাদের খবর কেও রাখে না। তারা থেকে যায় পর্দার আড়ালে।

টেবিলে কায়দা করে কাপড় বিছানো। তারপর কচ কচ করে কাঁচিতে কাটা। পাশেই সেলাই মেশিনের খরর খরর শব্দ। পোশাক বানানোয় ব্যস্ত দর্জিরা। ঘুম নেই দর্জিপাড়ায়।

ঈদকে সামনে রেখে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের দর্জিবাড়ির কারিগররা। ঠাকুরগাঁও বিভিন্ন মার্কেটে দর্জির দোকানের কারিগরদের এখন দম ফেলার জো নেই। দিন-রাত নতুন নতুন পোশাক বানিয়ে চলেছেন তারা।

ঠাকুরগাঁও নর্থ সার্কুলার রোডের ইডেন টেইলার্সের মালিক শ্রী লিটন চন্দ্র গোস্বামি জানান, পচিঁশজন কারিগর দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলাম। রোজার আগে কাজের অর্ডার বেশি থাকায় আরও কয়েকজন কারিগর নিয়োগ দিয়েছি। তারপরও গ্রাহক সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাজের অর্ডার এখন পর্যন্ত ভাল এলেও তা গত বছরের তুলনায় কম। ঈদের আগে অর্ডার আরও বাড়তে পারে।

তিনি আরো জানান, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করে থাকি। এ কারণে আমার দোকানে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। রমজানের আগেই কাজের চাপ শুরু হয়েছে।

রবিউল আলম নামে এক গ্রাহক জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি তৈরি করা শার্ট-প্যান্ট পরেন। প্রতি বছর তিন থেকে চার সেট পোশাক বানাতে হয় তার। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদেও। একটি অভিজাত দোকানে একটি শার্ট ও একটি প্যান্ট ৭০০ টাকা মজুরিতে সেলাই করিয়েছেন তিনি।

Thakurgaon Dorji 2ঠাকুরগাঁও হাওলাদার মার্কেটে পোশাক বানাতে এসেছেন লিপি আক্তার। তিনি জানান, ‘ঈদের সময় সবাই চায় নতুন পোশাক পরতে। রেডিমেড পোশাকের দোকানে একই নকশার অনেক পোশাক থাকে। ফলে সেখান থেকে কেনা পোশাকটির স্বাতন্ত্র্য অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না। এজন্য প্রতিবারই ঈদে নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনে দর্জির কাছে বানাতে দেই।’

 

ঠাকুরগাঁও এলিট টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আকবর হোসেন জানান, অন্য দর্জিদের তুলনায় তার সার্ভিস ভালো। গ্রাহকও বেশি। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাপড় সেলাই শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি পোশাক সেলাইয়ের মজুরি প্রসঙ্গে জানান, অন্যান্য সময়ে একটি প্যান্টের মজুরি নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। কিন্তু ঈদের সময় কারিগরদের পারিশ্রামিক বেড়ে যাওয়ায় এর মজুরি দাঁড়ায় ৪০০ টাকা। অন্যদিকে শার্টের মজুরি ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

বড় মার্কেটের দর্জি দোকান ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ছড়ানো ছিটানো সকল দর্জিবাড়িতেই ঈদে বাড়তি ভিড় ।

Spread the love