শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাজার থেকে দেশী প্রজাতির মাছ অদৃশ্য

বেলাল উদ্দিন, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। গত ২৫বছরের মধ্যে বিলুপ্তি ঘটেছে ৩০ প্রজাতির মাছ। আরও ১৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশী বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির সাথে মাছের সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থান করে নিচ্ছে বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেও চাষ করা হচ্ছে বিদেশী প্রজাতির মাছ। জলবায়ু পরিবর্তন, ছোট বড় নদ-নদী, জলাশয়, বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে দেশী প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হারিয়ে গেছে মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজণন ক্ষেত্র। শহর বন্দর গ্রামে পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ও চাষাবাদের জমিতে পরিণত করার ফলে দেশী প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মাছের জন্য খ্যাত চলনবিল ২৫ বছর আগেই ভরাট হয়ে গেছে। বিশাল বিস্তৃত চলনবিল আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। অপরিকল্পিত উপায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তা নির্মাণের ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী, খাল বিলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে এক কালের প্রবল স্রোতস্বিনী করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, হুরাসাগর, গুমানী, মহানন্দা, বুড়িতিস্তাসহ অভ্যন্তরীণ শতাধিক নদী। এসব নদ নদী, বিল, জলাশয় ভরা ছিল দেড় শতাধিক দেশী প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। ফলে ক্রমশই বিলুপ্তি ঘটছে দেশী প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নদ নদীর স্রোত ধারায় জাল ফেলে অবাধে রেণু পোনা আহরণ, বেআইনীভাবে পোনা আহরণ ও ছোট মাছ বাজারজাত করা ও নিধন করায় দেশী প্রজাতির মাছ ধংস হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশী ৩০ প্রজাতির মাছের মধ্যে মৌকা, চেলা, মৃগেল, বাউশ, কড়াপুটি, সরপুটি, টেংরা, গোলসা, চাপিলা, কর্তি, বাইজা, চিকাশি, নওলা, কানিয়া, গুচি, ভ্যাদা, নন্দই, ভেটকি, পাবদা, গজার, শোল, ফলি, খোসল্লা সহ চলনবিলের বিখ্যাত, কৈ বিলুপ্তি ঘটেছে। ভাগ্যক্রমে বাজারে বিলুপ্ত মাছে মদ্যে কোন কোন মাছের দেখা মিললেও দাম প্রায় আকাশ চুম্বি গগনভেদী। ১কেজি পবদা মাছ ৮/৯শত টাকা, ১কেজি চেহেলী মাঠ ৫শত টাকা আর ১কেজি মৌকা মাছ সর্বনিম্ন ৬শত টাকা, সবার পরিচিত পুঁটি মাছ ৪/৫শত টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিলুপ্ত এসব মাছের স্থান দখল করে নিয়েছে, থাইপুটি, সিলভারকার্প, জাপানি রুই, ব্রিগেড, তেলাপিয়া জাতীয় বিদেশী প্রজাতির মাছ। পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদ নদীর বিখ্যাত পাঙ্গাস মাছেরও বিলুপ্তি ঘটছে বলে মৎস্য বিভাগের অভিমত। নদীর পাঙ্গাসের পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পুকুরে চাষ করা পাঙ্গাস। এখন পুকুরেও চাষ শুরু হয়েছে জাপানী ও থাই কৈ। প্রাণী বিদ্যা বিশেজ্ঞদের অভিমত, দেশী মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি ও অবাধে পোনা আহরণ বন্ধ করা না হলে আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশী প্রজাতির সব ধরনের মাছের বিলুপ্তি ঘটবে। দেশী প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটলে মাছের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। বিদেশী মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনের সাথে সাথে দেশী প্রজাতির মাছ চাষ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে চলনবিল ও আভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে দেশী প্রজাতির মাছ চাষের উপযোগী করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞগণ।

Spread the love